বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ঘটনা নিশ্চয়ই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। যার মাধ্যমে জন্ম হয় জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের। সে জন্ম ছিল যন্ত্রণাদায়ক, অসংখ্য রক্ত ও লাশের সীমাহীন স্তূপ পেরিয়ে প্রতিরোধের অন্য পিঠে ছিলো আমাদের বিজয়। প্রায় দুই দশকের সামরিক শাসনের পর বাঙালি বিস্মৃত হয়েছিলো তার সবচেয়ে গর্বের অর্জনটির বিষয়ে। ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে কলম তুলে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিস্মরণীয় কীর্তির কথা প্রচার করে বিস্মৃতির সে অমানিশার ঘোচাতে এগিয়ে এসেছেন উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া জান্নাতুল নাঈম প্রীতি। সাহিত্যের বিমূর্ত চিত্রায়নের মাধ্যমে তিনি বুনতে চান পূর্বপুরুষের এমন সব কীর্তি যা শিহরণ জাগাবে বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের লোমকূপে।
সিরাজগঞ্জের মেয়ে জান্নাতুল নাঈম প্রীতি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন শৈশব থেকেই। তাঁর কলমের ছোঁয়ায় মুগ্ধতা ছড়ায় শৈশবের আনন্দময় একটি জগত। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে ভালোবেসে তিনি লিখে যেতে থাকেন অবিরাম। মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা তাঁকে বেশ টানে। কলমের ধ্রুপদী চিত্রায়নে তিনি বয়ান করতে থাকেন মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডচিত্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হীরন্ময় চরিত্র হয়ে ধরা দেয় তাঁর লেখায়। পাঠকের হৃদয়ে এভাবেই তিনি বুনে দেন এ জাতির বীরত্বের উপাখ্যান। মননে ও মগজে সঞ্চারিত করেন শাশ্বত বাঙালির রূপ। জান্নাতুল নাঈম প্রীতির লেখা “একাত্তরের বীর নারীরা” সম্প্রতি ছাপা হয়েছে দৈনিক ইত্তেফাকের পাতায়। তাঁর লেখা ইতিহাস আশ্রিত বই “বাংলাদেশ নামটি যেভাবে হলো” জিতেছে ইউনিসেফ প্রবর্তিত “মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড” এর প্রথম স্থান। লেখালিখি করে প্রীতির অর্জনের ঝুলিটা বেশ ভারী। ঐতিহ্য-গোল্লাছুট গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় তিনি “অন্যতম সেরা” হয়েছেন যথাক্রমে ২০০৫, ২০০৬, ২০০৮ ও ২০১০ সালে। অ্যাংকর চিলড্রেনস গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় সেরা গল্পকারের তকমা পেয়েছেন ২০০২ সালে। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ফিল্ম ফেস্টিভালে সেরা চিত্রনাট্যসহ অসংখ্য পুরস্কার বগলদাবা করেছেন আঠারো বছর বয়সী মেয়েটি। কৈশোরের চেতনায় তিনি এঁকে নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের স্বরূপ। লেখালিখি সম্বল করে যা বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের সুলুক সন্ধান করছে অবিরাম।
মুক্তিযুদ্ধকে নতুনভাবে চিনেছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম। একাত্তরের বিজয়ের মৌতাত তারা আস্বাদন করছে পূর্বপুরুষের বীরত্বের শিহরণ জাগানো শৈল্পিক উপস্থাপনার মাধ্যমে। একাজেই ব্যস্ত আছেন প্রীতি। একাত্তরের চেতনায় নিজেকে ও তাঁর কলমকে শানিয়ে নিয়ে লড়ছেন সত্য, ন্যায় ও স্বজাতির ইতিহাসের স্বপক্ষে।
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
উচ্চমাধ্যমিক ২য় বর্ষ
গ্রাম: তিন নান্দিনা, ডাকঘর: সাহেবগঞ্জ
থানা: স্লংগা, জেলা: সিরাজগঞ্জ