বইয়ের সাথে জীবনের একটি আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে, বই মনন গঠনের ভিত্তি স্বরূপ যা জীবনের প্রকৃষ্ট দর্শনকে নির্ধারন করে দেয়। কুমিল্লার “পাঠাগার আন্দোলন” সেই বই পড়ার চর্চাকে বিস্তৃত করার শপথ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে গত এগারো বছর ধরে। তরুণদের মাঝে বইয়ের আলো বিলিয়ে দিয়ে একটি আধুনিক, মননশীল ও অসাম্প্রাদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলছে অনিঃশেষ।
বইকে অনন্ত যৌবনা বলেছিলেন পারস্যের কবি ওমর খৈয়াম। সত্যিই বই চির তরুণ। সাহিত্য কিংবা চিন্তার বাহন হয়ে যুগের পর যুগ মানুষের মধ্য সংযোগ প্রতিষ্ঠায় এর জুড়ি নেই। কুমিল্লার “পাঠাগার আন্দোলন” বই পরাকে উৎসাহিত করতে চায়। চায় বইয়ের নেশায় বুঁদ একটি প্রজন্ম যা জ্ঞানে ও চিন্তার গভীরতায় বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে আমূল বদলে দেবে। আলোকিত মানুষ হিসেবে বুক উঁচু করে দাঁড়াবে পৃথিবীর অন্যান্য জাতিগুলোর সামনে। লক্ষ্য হিসেবে সংগঠনটি বেছে নিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও বইয়ের প্রসারের ব্যাপারটাও। যা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের সাথে সংগতিপূর্ণ ও “ভিশন ২০২১” বাস্তবায়নের পক্ষে অনুকূল। বই পড়ুয়া একজন মানুষ খারাপ কাজ করতে পারে না বলে বিশ্বাস করে “পাঠাগার আন্দোলন”। বই পড়ার ক্ষেত্রে তরুণদের উৎসাহিত করার পাশপাশি তাঁরা বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা, শিশু শ্রম ইত্যাদি বন্ধের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও অন্যান্য সুকুমার বৃত্তির চর্চা করে তাঁরা মানবীয় গুণাবলীর লালনে উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁদের সামনে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের নির্মাণ। যা একাত্তরের শহীদদের স্বপ্নের ধারণ। জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদী চিন্তাচেতনা প্রগতি ও সামাজিক শৃঙ্খলার পথে অন্তরায়। তাঁদের নিরন্তর প্রচারণা চলছে এসব অশুভ উদ্যোগের বিরুদ্ধে। এ লক্ষ্য তাঁরা সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। বইয়ের মাধ্যমে প্রচার করছেন ভালোবাসা। ঘৃণার নিগড় থেকে একজন মানুষকে মুক্ত করে বইয়ের সন্ধান দিয়ে সহনশীলতার সংজ্ঞায়ন করছেন নতুন উদ্দীপনায়। বুকে মুক্তিযুদ্ধের প্রদীপ জ্বেলে তাঁরা পথ চলছেন আঁধারের জমাট দুর্গ ভেদ করে।
“পাঠাগার আন্দোলন” একটি অসামান্য উদ্যোগ যা বইয়ের জাদুকরি সাহচার্যের মায়া বিলিয়ে যাচ্ছে মানুষের মধ্যে। এর মাধ্যমে কেবল একটি প্রজন্ম নয় গড়ে উঠছে শিক্ষা ও মনুষ্যত্বের ধারক একটি অনন্য প্রজন্ম যাঁরা বইয়ের সাথে ভালোবাসবে দেশকেও। মুক্তিযুদ্ধকে বুকে আগলে রেখে ছড়িয়ে যাবে আলোকিত ভবিষ্যতের রক্তবীজ। যা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করবে বিশ্বের মঞ্চে।