কখনো কখনো সাদা কাগজে লেখা কিছু বিচ্ছিন্ন শব্দ দিয়ে কোন কোন বিষয়কে ব্যাখ্যা করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। “অন্ধত্ব” শব্দটিও ঠিক এমনই একটি শব্দ। শত চেষ্টার পরেও একজন স্বাভাবিক ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে একজন অন্ধ ব্যক্তির দুর্ভাগ্য বর্ণনা করা অসম্ভব। একজন অন্ধ কিংবা দৃষ্টিহীন ব্যক্তিই কেবল বুঝতে পারে তার যন্ত্রণা কি। আমাদের এ দেশের কথা বিবেচনা করে বলতে হয়, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় কষ্ট এবং অসুবিধার স্বীকার এ মানুষগুলোর জীবনে একরাশ আলোর সুবাতাস নিয়ে আসার জন্য কাজ করে যাচ্ছে একটি সংগঠন।সংগঠনটির নাম স্রোত- প্রধানত চট্টগ্রাম ভিত্তিক তারুণ্য নির্ভর একটি সামাজিক সংস্থা। শিক্ষা বিশেষ করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদেরকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার দৃপ্ত শপথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এ সংগঠনটি।২০১৪ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী থেকে যাত্রা শুরু করা এ সংগঠনের।
বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের সমাজের অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের তুলনায় বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরাই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তাদের শিক্ষা পদ্ধতি ও বাকিদের চাইতে আলাদা।ব্রেইল পদ্ধতির পড়ালেখা ও শ্রুতিলেখক ছাড়া তাদের পড়ালেখা চালানো অসম্ভব।কিন্তু এই পদ্ধতিগুলো এবং ব্রেইল উপকরণ ও সহজলভ্য না হওয়ায় আমাদের সমাজে দৃষ্টিহীনদের পড়ালেখার সুযোগ খুবই কম। আর ঠিক এই সমস্যা নিরসঙ্কল্পে “স্রোতের” অবদান প্রশংসনীয়। শারীরিক ক্ষমতায় অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও শিক্ষাগত যোগ্যতায় ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুরা যেন অন্য শিশুদের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারে এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে স্রোত।এই সংগঠনটি অপেক্ষাকৃত নবীন হলে ও এই এক বছরের মধ্যেই তারা উল্লেখ করার মত কিছু কাজ করেছে।স্রোতের শুরু হয় ১০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষার দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে । এরপর তারা অন্ধ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতি নিয়ে তিনদিন ব্যাপী একটি কর্মশালার আয়োজন করে। এছাড়াও পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীদের বিশেষ সহায়তা প্রদান ও শ্রুতিলেখক প্রশিক্ষণ, মুখোমুখি শিক্ষা সহায়তা, শ্রুতিলেখক সহায়তা, শিক্ষা উপকরণ ও ঈদের কাপড় বিতরণ তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য বিভিন্ন সৃজনশীল ও প্রতিযোগিতামুলক আয়োজনে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় এ সংগঠনটি। এ প্রতিযোগিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চারুলতা শিশু উৎসব, বাংলা বানান প্রতিযোগিতা ‘শব্দকল্পদ্রুম’, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক প্রতিযোগিতা’ ও আমেরিকান কর্নার আয়োজিত গল্প বলার আসর। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে ও বেশ পরিকল্পনার ছাপ রয়েছে।মোট কথা, একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু তার পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার জন্য যে সকল অসুবিধার সম্মুখীন হয়, সেগুলো নিরসনকল্পে ‘স্রোত’ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।মোট কথা, একটি বেসরকারি সংগঠন হয়ে ও “স্রোত”র অবদান সামাজিক ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অনন্য। স্রোতের পরিচালনা পরিষদের মধ্যে অনেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।
এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে “স্রোত” সমাজের মধ্যে এ ধারণাটি ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে যে, সুযোগ পেলে মানুষের পক্ষে যে কোন প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে সামনে এগিয়ে চলা সম্ভব। অক্ষুণ্ণ থাকুক “স্রোতের” এ স্রোত। স্রোতের সামনে ভেঙ্গে যাক সকল বাধার বাঁধ ।