বই জ্ঞানের প্রতীক। বই আনন্দের প্রতীক। বই মানুষের অন্তরাত্মাকে সমৃদ্ধ করে। মানুষের জ্ঞানকে বিকশিত করে। বই পড়ার অভ্যাস মানুষের জীবনে অনেক সময় সরবে কিংবা নীরবে হলে ও কালের পরিক্রমায় মানুষ জ্ঞান লাভের লোভে বইয়ের কাছে সমর্পিত হয়েছে। আর বইয়ের আধার হচ্ছে পাঠাগার বা লাইব্রেরী। একটি উন্নত জাতি গঠনের জন্য যেমন করে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দরকার আছে, তেমনি ঐ জাতির মননশীলতার উন্নয়নের জন্য দরকার গ্রন্থাগার। এ কারনেই ময়মনসিংহ জেলার আলালপুর গ্রামের জিয়াউর রহমানের “আলোকিত গণ গ্রন্থাগার” তৈরির মতো উদ্যোগ আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে ফুটে উঠে।
“আলোকিত গণ গ্রন্থাগার”র যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। বই পড়ার মাধ্যমে তরুণ সমাজের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়া এই পাঠাগারটির লক্ষ্য। এখানে কিছু কথা বলে রাখা প্রয়োজন। তা হলো সময়ের সাথে সাথে এবং প্রযুক্তির বিকাশের কারণে মানুষের পাঠ্যভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। যার কারণে মানুষ এখন কাগজের বইয়ের পাশাপাশি ই-বুকে ও ব্যাপকভাবে আগ্রহী। এ কথাটি মাথায় রেখে “আলোকিত গণ গ্রন্থাগার” একটি ব্যতিক্রমধর্মী ই-পাঠাগার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে যা নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এছাড়া ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাইকে ইন্টারনেট ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলা ও সংগঠনটির অন্যতম লক্ষ্য। একটি জাতির মননশীলতা উন্নয়নের একমাত্র চাবিকাঠি হলো বই। যে জাতির মধ্যে পাঠ্যভ্যাস যত ভাল, মেধা এবং চিন্তার দিক দিয়ে সে জাতি তত বেশি উন্নত। একটি বিশাল কর্মকাণ্ড মানুষের মনে যে প্রভাব ফেলতে পারে না তার চাইতে বহুগুণ বেশি প্রভাব ফেলতে পারে একটি ভাল বই। বই মানুষের চিন্তা- চেতনাকে বিকশিত করার মাধ্যমে প্রকৃতি ও তার আশেপাশের জগত নিয়ে মানুষের ধারনাকে পরিবর্তন করতে পারে। মানুষের অভ্যন্তরের ঘুমন্ত শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারে একমাত্র বই। এতসব কারণে জাতি গঠনে বই এবং পাঠাগারের গুরত্ব অপরিসীম। অন্যদিকে ইন্টারনেট হল এক মায়াজাল যেখানে জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত। মুহূর্তের মধ্যে মানুষ তার কাঙ্খিত বস্তুটি অতি সহজেই খুঁজে নিতে পারে এই মায়াজালের মাধ্যমে। কাজেই এই জ্ঞানের বিশ্বকোষ যদি আমরা আমাদের তরুণ সমাজের কাছে উন্মুক্ত করতে পারি তাহলে তা হবে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ঠিক এখানেই জিয়াউরের “আলোকিত গণ গ্রন্থাগার”র সফলতা। সত্যিকারের সমৃদ্ধ এবং একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিনা খরচে ইন্টারনেট ও গ্রন্থাগার সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে এ সংগঠনটি।
জিয়াউরের এ পদক্ষেপ হয়তো তাৎক্ষনিক সফলতা বয়ে আনবে না কারণ জ্ঞান নামের জিনিসটি মানুষের মনকে আস্তে আস্তে কিন্তু স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করে। কিন্তু তিনি যদি তার এ কার্যক্রম এভাবে চালু রাখতে পারেন তবে তার এই অবদান তার অঞ্চলের মধ্যে নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হবে তরুণ সমাজ।