মঙ্গল গ্রহের লাল পটভূমিতে কেমন লাগবে আমাদের লাল-সবুজ পতাকাকে? কল্পনার লাগাম ছেড়ে দিলে সুন্দর, এমনটাই ভাবছেন তো? সুদূর মঙ্গল গ্রহে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর স্বপ্নটা আর কেবলই কল্পনা নয়। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) তরুণ শিক্ষার্থীদের আবিষ্কৃত “মঙ্গল বারতা” নামক মঙ্গলযান বাস্তবে রূপান্তর করেছে সে কল্পনাকে। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত “ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক বিশ্ব প্রতিযোগিতায় এমআইএসটি পশ্চিমের নামজাদা ইয়েল, টেক্সাস ও কুইন্স ইউনিভার্সিটির মতো নামজাদা প্রতিষ্ঠানকে টপকে দ্বাদশ স্থান দখন করে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলার তরুণদের মঙ্গলজয়ের অভিলাষ কেবলই উচ্চাশা নয়!
১৪ জন শিক্ষার্থী আর ৪ জন শিক্ষকের নিরলস পরিশ্রমে গড়ে ওঠা “মঙ্গল বারতা” রোবটটির ডিজাইন করেছেন সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী কিশোয়ার শাফিন। মাত্র আট লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত রোবটটির কাঠামো তৈরি করা হয়েছে ধোলাইখাল থেকে। ৫০ কেজি ওজনের রোবটটি ৭০ কেজি ওজন বহন করতে পারে। মঙ্গলের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য এতে মনুষ্যকৃতির আড়াই ফুট একটি হাত সংযুক্ত আছে। মঙ্গল গ্রহে জীবনের অস্তিত্বের সন্ধানে চালানো যে কোন অভিযানে অনায়াসে শামিল হতে পারে “মঙ্গল বারতা”। মঙ্গলের কঙ্করময় ভূমিতে এটি যেমন সহজেই চলাচল করতে পারে তেমনি মাটি খুঁড়ে জীবাশ্ম, শৈবাল, ছত্রাক প্রমূখের সন্ধান করতে পারে। তারবিহীন প্রযুক্তিতে রোবটটিকে এক কিলোমিটার দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মঙ্গল গ্রহে মানুষের আবাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া “দ্যা মার্স ওয়ান” নামের নেদারল্যান্ড ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৪ সালের মে মাসে আয়োজন করেছিলো “ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক বিশ্ব প্রতিযগিতা। দুনিয়ার বাঘা বাঘা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে টপকে এতে দ্বাদশ স্থান অধিকার করে আমাদের “মঙ্গল বারতা”। জানিয়ে দেয় মঙ্গলকে মনুষ্যবাসের উপযোগী করে তোলার প্রচেষ্টায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। সরকার ঘোষিত ‘ভিশন ২০২১” ও “ডিজিটাল বাংলাদেশ” বাস্তবায়নে প্রযুক্তি চর্চার বিকল্প নেই। রোবট নির্মাণ ও মঙ্গলসহ সৌরজগতে পৌঁছানোর অভিলাষ একদিন পুরো পৃথিবীতে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করবে।
“মঙ্গল বারতা” কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পংক্তি থেকে জীবন্ত রূপ লাভ করেছে আধুনিক মঙ্গলযান হিসেবে। সে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন এমআইএসটি’র তরুণ শিক্ষার্থী কিশোয়ার শাফিন ও তাঁর দল। স্বপ্নপুরণে উদ্যমী হলে যে পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করা সহজ তাও প্রমাণ হয়েছে যখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, সেনা কল্যাণ সংস্থা ও ট্রাস্ট ব্যাংক তাঁদের সারথী হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। বাঙালির গান-কবিতায় অনেকটা স্থান দখল করা সুদূরের মঙ্গল গ্রহ এভাবেই একদিন চেয়ে দেখবে লাল-সবুজের উড্ডীণ পতাকা।