প্রতিবন্ধী সমস্যা আমাদের দেশের একটি অতি পরিচিত সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আমাদের দেশে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ। কোন সন্দেহ নেই, সংখ্যাটি অত্যন্ত বিশাল। তাই,এ কথা আমাদের অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে যে, এতো বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যাকে উন্নয়নের মূল স্রোতে যদি আমরা সম্পৃক্ত করতে না পারি তাহলে বর্তমান সরকারের “ভিশন-২০২১” প্রকল্প ভীষণভাবে বাধাগ্রস্থ হবে। এরূপ পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ জেলার “স্বপ্নকুঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থা” র উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
২০১১ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করা এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জনাব দেবাশীষ ঘোষ বাপ্পী। বর্তমানে এ সংগঠনটির প্রধান হলেন একজন নারী-ঝরা মনি বিশ্বাস। প্রতিবন্ধী জনগোষ্টীর জীবনমান উন্নয়ন ও মানসিক বিকাশ তথা সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা ছাড়াও এ সংগঠনটির অন্যান্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ , মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন এবং প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকদের বিভিন্নভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা। আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার কিছু অসঙ্গতির কারণে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের সুযোগ আশংকাজনকভাবে কম। ফলে দেখা যায়, একটি বিপুল পরিমাণ জনগোষ্টী সবসময় অনুৎপাদনশীল হিসেবে থেকে যাচ্ছে। ঝরা মনির “স্বপ্নকুঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থা” নামের এ সংগঠনটির সার্থকতা এখানেই। যদি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোত ধারায় সত্যিকারভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য তা হবে একটি বিরাট সাফল্য।
এরূপ কার্যক্রমের স্বীকৃতি সরূপ সংগঠনটি ইতিমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছে। প্রতিষ্ঠাতার তাদের কার্যক্রম প্রতিবন্ধীদের মাঝে যে আশার আলো দেখাচ্ছে – এর মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারি সংগঠনটি নিঃসন্দেহে সকলের কাছেই অনুকরণীয়। এ সংগঠনটি প্রতিবন্ধীদের মাঝে এ আশাবাদ প্রতিষ্ঠা করছে যে তারা কোনমতেই সমাজের বোঝা নয়- বরং উপযুক্ত সুবিধা এবং সুযোগ পেলে তারা ও সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারে তাদের সক্ষমতা এবং একইসাথে দেশকে পারে এগিয়ে নিতে। “স্বপ্নকুঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থা”র একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে শুধু প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন নয়, বরং তারা প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকদের জীবনমান উন্নয়নে এবং একইসাথে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেও কাজ করছে। এটি একইসাথে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী কিন্তু খুবই কার্যকরী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
“স্বপ্নকুঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থা”র স্বপ্নটি আসলে সফল হওয়া খুবই জরুরী। এতে করে জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশের স্বপ্ন যে সত্যি হবে তাই নয় বরং তা দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে নতুন করে বাংলাদেশকে চেনাতেও সাহায্য করবে।